বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করে যে নারী - ফাতিমা আল ফিহরি • Bangla Islamic Stories

 ফাতিমা আল-ফিহরি

বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করে যে নারী - ফাতিমা আল ফিহরি • Bangla Islamic Stories
ফাতিমা আল-ফিহরি আনুমানিক ৮০০ খ্রিস্টাব্দে, বর্তমান তিউনিসিয়ার কাইরাওয়ান শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ আল-ফিহরিয়া আল-কুরাইশিয়া। তিনি উম্মুল বানীন বা ‘সন্তানদের মা হিসবে অধিক পরিচিত ছিলেন। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে পৃথিবীর প্রথম ডিগ্রি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলেন তিনি।

ফাতিমা আল ফিহরির বাবা মুহাম্মদ আল ফিহরি ছিলেন একজন সফল ধনী ব্যবসায়ী। তিনি ফাতিমা আল-ফিহরি এবং তার বোন মারিয়াম আল-ফিহরিকে ক্লাসিকাল আরবি ভাষা, ইসলামিক ফিক্হ এবং হাদিস শাস্ত্রের উপর পড়াশোনা করান।প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর এই ফেজ শহরেই ফাতিমার বাবা তাকে বিয়ে দেন। কিন্তু বিয়ের কয়েক বছরের মাথায়ই ফাতিমাদের পরিবারে দুর্যোগ নেমে আসে। অল্প সময়ের মধ্যেই তার বাবা, ভাই এবং স্বামী মৃত্যুবরণ করেন। রয়ে যান কেবল এতিম দুই বোন ফাতিমা এবং মারিয়াম। বাবার রেখে যাওয়া বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির উত্তরাধিকার হয়েও বিলাসীতার জীবন ত্যাগ করে জনকল্যাণমূলক কাজে লাগানোর চিন্তা করেছিলেন| সে সময় ফেজ শহরে দেশ বিদেশ থেকে অনেক মুসলমান আসতো, কিন্তু ফেজ এর কেন্দ্রীয় মসজিদে তাদের জায়গা সংকুলান হতো না। তাই তারা দুই বোন সিদ্ধান্ত নেন, বাবার রেখে যাওয়া এই বিশাল সম্পদ দিয়ে ওয়াকফ বা সাদাকায়ে জারিয়া হিসেবে মসজিদ নির্মাণ করবেন।

বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করে যে নারী - ফাতিমা আল ফিহরি • Bangla Islamic Stories
কারাউইন মসজিদ

সে সময়ে এক বোন মারিয়াম নির্মাণ করেন আন্দালুস মসজিদ, আর ফাতিমা নির্মাণ করেন কারাউইন মসজিদ।৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে, এই ফেজ নগরী তেই ফাতিমা তার ভাগের সমস্ত অর্থ দিয়ে একটি মসজিদ নির্মাণ এর কাজ শুরু করেন। অর্থ দানের পাশাপাশি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সার্বক্ষণিক নির্মাণ কাজ তদারকিও করেন। যেদিন নির্মাণ শেষ হয়, সেদিন তিনি নিজের নির্মিত মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করে নামাজ আদায় করেন এবং আল্লাহ্র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। 

জন্মভূমি কাইরাওয়ানের নামানুসারে তিনি মসজিদটির নাম রাখেন ‘কারাউইন মসজিদ’। এখানে একসাথে প্রায় ২২ হাজার মানুষ নামাজ পড়তে পারত। কেবল ইবাদতের স্থান না হয়ে এই মসজিদ শিগগিরই হয়ে ওঠে ধর্মীয় নির্দেশনা ও রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্র।  

বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করে যে নারী - ফাতিমা আল ফিহরি • Bangla Islamic Stories
Mosque-University of al-Qarawiyyin

শুরুতে এই মসজিদ টি একটি ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্র হয়ে গড়ে উঠলেও পরে সেখানে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করে পারিপার্শ্বিক বিষয়াদি পড়ানো হয়। অল্প সময়ে এর ছাত্রসংখ্যা দাঁড়ায় আট হাজারে। কুরআন, হাদীস ও ইসলামী আইনশাস্ত্রের পাশাপাশি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল, জ্যোর্তিবিজ্ঞান, ব্যাকরণ, রসায়ন, চিকিৎসাশাস্ত্র, গণিত, সংগীতসহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে পাঠদান করা হত। বিষয়ভিত্তিক অধ্যয়নের প্রসারতার কারণে শীঘ্রই এর খ্যাতি সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পরে। অনায়াসেই এই মসজিদ টি মসজিদের সাথে সাথে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। 


অনেক বিখ্যাত মুসলমান পণ্ডিত এবং দার্শনিক এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেছেন। বিখ্যাত মালিকি বিচারপতি ইবনে আল-আরাবি, অগ্রণায়ন পণ্ডিত ইবনে মাইমুন, ইতিহাসবিদ ইবনে খালদুন, জ্যোতির্বিদ নূরুদ্দীন আল-বিতরুজি (অ্যালপে ট্রেজিয়াম), আল-ইদ্রিসি, ইবনে খতিব, ইবনে হিরজিহিম ও আল ওয়্যাজ্জেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র বা শিক্ষক ছিলেন। 

বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করে যে নারী - ফাতিমা আল ফিহরি • Bangla Islamic Stories
Mosque-University of al-Qarawiyyin 
শুধু মুসলমান নয়, মধ্যযুগের অনেক খ্যাতিমান ইহুদি এবং খ্রিস্টান মনীষীও এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেছেন। এর ছাত্রদের মধ্যে একজন হলেন, পোপ দ্বিতীয় সিলভাস্টার, যিনি এখান থেকে আরবি সংখ্যাপদ্ধতি বিষয়ে ধারণা লাভ করে সেই জ্ঞান ইউরোপে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং ইউরোপীয়দেরকে প্রথম শূন্যের (০) ধারণার সাথে পরিচিত করেছিলেন।এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম অমুসলিম অ্যালামনি ছিলেন- ইহুদি দার্শনিক ও ধর্মতত্ত্ববিদ মুসা বিন মাইমুন বা মাইমোনাইডস।

বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করে যে নারী - ফাতিমা আল ফিহরি • Bangla Islamic Stories
ফাতিমা আল-ফিহরি ৮৮০ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন। তার ইন্তেকালের ১১৪১ বছর পার হলেও তার প্রতিষ্ঠিত আল কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো শিক্ষাকার্যক্রম চলমান|মরক্কোর প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের মধ্যে আল কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। মরক্কোর নারীদের কাছে এখনো ফাতেমা একজন অনুসরণীয় অনুপ্রেরণাদানকারী নারীর আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন।

ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত 

Bangla Islamic Stories